তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:

ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অবহেলায় দৈনিক সমকালের ক্রাইম ও স্পোর্ট রিপোর্টার রুবেল খানের আড়াই বছরের মেয়ে রাইফা খানের মৃত্যু’র ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার ( ১৮ জুলাই) বিকেল নগরীর চকবাজার থানায় মামলাটি দায়ের করেন শিশু কন্যা রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান। মামলায় ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলীসহ (৫৭) তিন চিকিৎসককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এজাহারে অভিযুক্ত বাকি তিনজন হলেন- ডা. বিধান রায় চৌধুরী (৫০), ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত (৩২), ডা. শুভ্র দেব (৩২)।

বিষয়টি নিশ্চিত নগর নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (উত্তর) মোস্তাইম হোসেন জানান, একটি এজাহার পেয়েছি। এজাহারে চার জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাছাই বাছাই চলছে, হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই মামলাটি গ্রহণ হবে। এক বিষয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার বলেন যাই বলেন কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়। দোষীদের অবশ্যই আইনের আতায় আনা হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে খোজঁ খবর নিচ্ছি। কে কোথায় অবস্থান করছেন।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন তার বাবা রুবেল খান। তিনি বলেন, আমরা এজাহারটি গ্রহণ করেছি। যাচাই-বাচাইয়ের পর এটিকে মামলা হিসেবে গণ্য করা হবে।

ওসি জানান, এজাহারে অভিযুক্ত চারজন হলেন- ডা. বিধান রায় চৌধুরী (৫০), ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত (৩২), ডা. শুভ্র দেব (৩২) ও ম্যাক্স হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী (৫৭)।

সাংবাদিক রুবেল খান সাংবাদিদের জানান, মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার কারনে দেরিতে মামলা করতে এসেছি। পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেছে। সাংবাদিক নেতা চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল এ বিষয়ে বলেন, বিএফইউজে’র নির্বাচনের কারনে মামলাটি করতে একটু দেরি হয়েছে। তাছাড়া যাবতীয় ডকুমেন্ড যোগার করে আমরা মামলা করেছি। সিইউজে’র সাধারন সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, আমরা আগেই বলেছি রাইফা হত্যাই যেন হয় চিকিৎসা সেবার সর্বশেষ মৃত্যু। যেহেুতু তদন্ত ৪ ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সেজন্য আমরা সবঠিকঠাক করে মামলা করেছি। পুলিশ আমাদের এ ব্যাপারে সার্ভিক সহযোগীতা করার আশ্বাসও দিয়েছেন।

এদিকে মামলার খবরটি পেয়ে অভিযুক্তরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি লিয়াকত আলী মামলা খবর পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন বলে একটি সূত্র জানায়। সূত্রটি অ=রো জানায়, সাংবাদিকরা চকবাজার থানায় এজাহার দেওয়ার পর বিএমএর এক শীর্ষ নেতা মামলা না নিতে জোর চাপ দেন। কিন্তু সাংবাদিক কঠোর অবস্থানে পুলিশকে মামলা নিতে হলো।

এর আগে ২৯ জুন রাতে নগরের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন সাংবাদিক রুবেল খানের মেয়ে রাইফা খান। মৃত্যুর পর থেকেই রাইফার পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকদের ভূল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণেই অকাল মৃত্যু ঘটে রাইফার।

ওই দিন রাতেই এ জন্য দায়ী ডাক্তার এবং নার্সদের আটক করে চকবাজার থানা পুলিশ। কিন্তু ভোর রাতে তাদের ছাড়িয়ে আনতে থানায় গিয়ে অশোভন আচরণ এবং চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা বন্ধের হুমকি দেন বিএমএ নেতা ফয়সল ইকবাল চৌধুরী ও তার সহযোগিরা।

এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলনের মুখে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ০৬ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্সে ত্রুটিসহ ১১টি অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানায়।